Last Updated:August 16, 2025 3:03 PM IST
Divorce Alimony: অনেক সময় বিবাহ বিচ্ছেদের পর এক পক্ষের আর্থিক ভাবে টিকে থাকার ক্ষমতা কমে যায় বা একেবারেই ভেঙে পড়ে। এই পরিস্থিতিতে আদালত থেকে আর্থিক সহায়তার যে বিধান রাখা হয়েছে, তাকেই বলা হয় ভরণপোষণ বা অ্যালিমনি (Alimony)।

বিবাহবিচ্ছেদ শুধু মানসিক আঘাতই নয়, আর্থিক দিক থেকেও জীবনে এক বড় ধাক্কা আনে। অনেক সময় বিচ্ছেদের পর এক পক্ষের আর্থিক ভাবে টিকে থাকার ক্ষমতা কমে যায় বা একেবারেই ভেঙে পড়ে। এই পরিস্থিতিতে আদালত থেকে আর্থিক সহায়তার যে বিধান রাখা হয়েছে, তাকেই বলা হয় ভরণপোষণ বা অ্যালিমনি (Alimony)।
ভারতে ভরণপোষণের নিয়ম বিভিন্ন ব্যক্তিগত আইন ও Code of Criminal Procedure, 1973 (CrPC) এর আওতায় নির্ধারিত। এর উদ্দেশ্য হল— যে স্বামী বা স্ত্রী আর্থিকভাবে দুর্বল, বিচ্ছেদের পরেও যাতে ন্যূনতম মর্যাদার সঙ্গে জীবনযাপন করতে পারেন, সেই নিশ্চয়তা দেওয়া। তবে ভরণপোষণ একরকম নয়; মামলার প্রকৃতি ও পরিস্থিতি অনুযায়ী এর ধরন ভিন্ন হতে পারে।
বিয়ে ভাঙার পর কী কী ধরনের খোরপোশ দিতে হয়? দেখে নিন তার ধরন (Types of Alimony) ভারতে ভরণপোষণ বা অ্যালিমনি (যা spousal maintenance বা spousal support নামেও পরিচিত) বিভিন্ন ব্যক্তিগত আইন ও Code of Criminal Procedure, 1973 (CrPC) এর আওতায় নির্ধারিত হয়। পরিস্থিতি অনুযায়ী ভরণপোষণের ধরন ভিন্ন হতে পারে।
১. স্থায়ী ভরণপোষণ (Permanent Alimony)--- বিবাহবিচ্ছেদের পরও যেসব স্বামী/স্ত্রী ক্রমাগত আর্থিক সহায়তার প্রয়োজন অনুভব করেন, তাদের স্থায়ী ভরণপোষণ দেওয়া হয়। এটি সাধারণত অনির্দিষ্টকালের জন্য দেওয়া হয়। প্রাপক স্ত্রী/স্বামী পুনর্বিবাহ করলে বা মৃত্যু হলে এটি বন্ধ হয়ে যায়। হিন্দু ম্যারেজ অ্যাক্ট, ১৯৫৫ এর ধারা ২৫ এবং অন্যান্য ব্যক্তিগত আইন অনুযায়ী এ নিয়ম কার্যকর।
২. অস্থায়ী ভরণপোষণ / অন্তর্বর্তীকালীন ভরণপোষণ (Temporary Alimony / Interim Maintenance)--- বিবাহবিচ্ছেদ মামলা চলাকালীন স্বামী/স্ত্রীকে দেওয়া হয়। এর মধ্যে আইনজীবীর খরচ, দৈনন্দিন জীবিকা ও মামলার চলাকালীন খরচ অন্তর্ভুক্ত থাকে। হিন্দু ম্যারেজ অ্যাক্ট, ১৯৫৫ এর ধারা ২৪ এবং CrPC এর ধারা ১২৫ অনুযায়ী প্রদান করা হয়।
৩. পুনর্বাসনমূলক ভরণপোষণ (Rehabilitative Alimony)--- সীমিত সময়ের জন্য দেওয়া হয় যাতে আর্থিকভাবে দুর্বল স্বামী/স্ত্রী আবার স্বনির্ভর হতে পারেন। এর উদ্দেশ্য হল শিক্ষালাভ বা কর্মসংস্থান পাওয়ার সুযোগ করে দেওয়া। কতদিন ভরণপোষণ দেওয়া হবে, তা আদালত পরিস্থিতি অনুযায়ী নির্ধারণ করে।
৪. প্রতিপূরণমূলক ভরণপোষণ (Reimbursement / Compensatory Alimony)--- একজন স্বামী/স্ত্রী যদি সংসারের জন্য নিজের চাকরি বা অর্থনৈতিক ক্যারিয়ার বিসর্জন দেন (যেমন চাকরি ছেড়ে সংসার সামলানো), তবে তাকে প্রতিপূরণ হিসেবে এই ভরণপোষণ দেওয়া হয়। এখানে ন্যায্যতার নীতি (Equitable principles) প্রযোজ্য হয়।
৫. এককালীন ভরণপোষণ (Lump Sum Alimony)--- মাসিক ভরণপোষণ দেওয়ার পরিবর্তে এককালীন অর্থ প্রদান করা হয়। এর ফলে মাসে মাসে মামলা লড়াইয়ের জটিলতা এড়ানো যায়। প্রাপক স্বামী/স্ত্রী এই অর্থ দিয়ে ঋণ শোধ, বাড়ি কেনা বা অন্যান্য প্রয়োজন মেটাতে পারেন।
৬. নামমাত্র ভরণপোষণ (Nominal Alimony)--- খুব অল্প পরিমাণ অর্থ ভরণপোষণ হিসেবে নির্ধারিত হয়। মূল উদ্দেশ্য হলো, ভবিষ্যতে প্রয়োজনে অধিক ভরণপোষণ দাবি করার আইনি অধিকার খোলা রাখা। সাধারণত তখনই দেওয়া হয়, যখন তাৎক্ষণিক আর্থিক প্রয়োজন নেই কিন্তু ভবিষ্যতে থাকতে পারে।
বিভিন্ন ব্যক্তিগত আইনের অধীনে ভরণপোষণ: বিভিন্ন ব্যক্তিগত আইনের অধীনে ভরণপোষণের নিয়মগুলি নিম্নরূপ - হিন্দু আইন: হিন্দু বিবাহ আইন, ১৯৫৫ (ধারা ২৪ এবং ২৫) অন্তর্বর্তীকালীন এবং স্থায়ী উভয় ধরণের ভরণপোষণের ব্যবস্থা করে। মুসলিম আইন: শরিয়া আইন এবং মুসলিম মহিলা (বিচ্ছেদের অধিকার সুরক্ষা) আইন, ১৯৮৬ অনুসারে বিবাহবিচ্ছেদের পর ইদ্দতকালীন (৩ মাস) সময়কালে সাধারণত ভরণপোষণ প্রদান করা হয়। খ্রিস্টান আইন: ১৮৬৯ সালের ভারতীয় বিবাহবিচ্ছেদ আইন (ধারা ৩৬ এবং ৩৭) খ্রিস্টান স্বামী/স্ত্রীর জন্য ভরণপোষণ নিয়ন্ত্রণ করে। পারসি আইন: পার্সি বিবাহ এবং বিবাহবিচ্ছেদ আইন, ১৯৩৬ বিবাহবিচ্ছেদের সময় এবং পরে উভয় ক্ষেত্রেই ভরণপোষণের ব্যবস্থা করে। ১৯৫৪ সালের বিশেষ বিবাহ আইন: এটি আন্তঃধর্মীয় বিবাহের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য এবং ধারা ৩৬ এবং ৩৭ অনুসারে ভরণপোষণের অনুমতি দেয়।
ভবিষ্যতের উপার্জন ক্ষমতা এবং সম্ভাবনা: মামলার সময় বেকার থাকলেও, শক্তিশালী যোগ্যতা এবং কর্মসংস্থানের বাস্তবসম্মত সম্ভাবনা সম্পন্ন স্বামী/স্ত্রী কম পরিমাণ অর্থ পেতে পারেন, কারণ আইন যেখানেই সম্ভব আত্মনির্ভরশীলতাকে উৎসাহিত করে। কল্যাণ দে চৌধুরী বনাম রীতা দে চৌধুরী, (২০১৭) ১৪ SCC ২০০ মামলায় এটি পুনঃনিশ্চিত করা হয়েছে।
আরটিআই-এর মাধ্যমে প্রকাশিত আয় এবং বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন সন্তানের প্রতি দায়িত্ব: তথ্য অধিকার আইন (RTI) এর মাধ্যমে প্রকাশিত একটি মামলায় ঝাড়খণ্ড হাইকোর্ট সম্প্রতি একটি রায়ে স্ত্রীর মাসিক ভরণপোষণ ৯০,০০০ টাকায় উন্নীত করেছে, কারণ তথ্য অধিকার আইন (RTI) প্রকাশ করে যে স্বামীর প্রকৃত আয় প্রতি মাসে প্রায় ২.৩ লক্ষ টাকা।
আদালত এই বিষয়টির উপরও উল্লেখযোগ্য গুরুত্ব আরোপ করেছে যে দম্পতির সন্তান অটিজম স্পেকট্রামে রয়েছে, যার জন্য ক্রমাগত যত্ন এবং মনোযোগ প্রয়োজন। পূর্ণকালীন যত্নশীল হিসেবে মায়ের ভূমিকা তাকে নিয়মিত চাকরি নিতে অক্ষম করে তুলেছে তা স্বীকার করে, আদালত এই বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন দায়িত্বগুলিকে ন্যায্য সহায়তা নির্ধারণের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসাবে বিবেচনা করেছে।
ভারতীয় আইনের অধীনে ভরণপোষণ, স্বামী/স্ত্রীর ভরণপোষণ এবং শিশু ভরণপোষণ সম্পর্কে আপনার অধিকারগুলি বুঝুন। উভয় পক্ষকেই তাদের সম্পত্তি এবং দায় মূল্যায়ন করতে হবে। এখানে কী ভাবে - যৌথ সম্পত্তির মালিকানাধীন, সম্পত্তি, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, বিনিয়োগ, গয়না এবং যানবাহন অন্তর্ভুক্ত। বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে আর্থিক বোঝা এড়াতে যৌথ দায় যেমন গৃহঋণ, গাড়ি ঋণ এবং ব্যক্তিগত ঋণ বিবেচনা করতে হবে। ভবিষ্যতে অর্থ প্রদানের দায় এড়াতে যৌথ ঋণ বা ক্রেডিট কার্ড থেকে আপনার নাম সরিয়ে ফেলুন।
আপনি যদি আর্থিকভাবে নির্ভরশীল হন, তাহলে বিবাহবিচ্ছেদের পরে জীবনযাত্রার ব্যয়ের জন্য একটি বাজেট তৈরি করুন। যদি আপনার একটি পৃথক ব্যাংক অ্যাকাউন্ট না থাকে তবে একটি পৃথক ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলুন। বীমা পলিসি, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এবং বিনিয়োগ পোর্টফোলিওতে মনোনীতদের আপডেট করুন। আপনি যদি ভরণপোষণ প্রদান করেন, তাহলে আর্থিক চাপ ছাড়াই আর্থিক ব্যবস্থাপনার জন্য সেই অনুযায়ী পরিকল্পনা করুন। পৈতৃক এবং বৈবাহিক সম্পত্তির ন্যায্য বিভাজন নিশ্চিত করুন।